প্রত্যয় ডেস্ক, পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ সংবাদদাতাঃ পশ্চিমবাংলার আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গেই জোট করে লড়বে কংগ্রেস। কংগ্রেসের মধ্যে যাঁরা এখনও বামেদের সঙ্গে জোট করতে মানসিক ভাবে তৈরি নন, তাঁদের এ কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেতা অধীর চৌধুরি। শনিবার বিক্ষুব্ধদের তিনি সাফ জানিয়ে দেন, হাইকমান্ড চাইছে, পশ্চিমবাংলায় বামেদের সঙ্গে জোট করতে হবে। এর অন্যথা করা যাবে না।
দীর্ঘ ৩৬ বছরের বাম জমানায় বহু কংগ্রেসি পরিবার অত্যাচারিত হয়েছে। খুন হয়েছেন অসংখ্য কংগ্রেসি নেতা ও কর্মী। সেই ক্ষতচিহ্ন তৃণমূল জমানার ৯ বছরেও ভুলে যেতে পারেননি বহু কংগ্রেসি নেতা, কর্মী ও সমর্থক। বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠতা তাঁরা এখনও মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের অধিকাংশই চান না, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। বরং তাঁরা চান, তৃণমূল ও বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমের বিরুদ্ধেও লড়াই করুক কংগ্রেস। কিন্তু প্রদেশ সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরি তা চান না। কেন চান না, তা পরিষ্কার করে দিলেন শনিবার। এর পর কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ অংশ কী করে, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের একাংশের অনুমান, নির্বাচনের সময় তাঁরা যদি অন্য কোনও পথ অনুসরণ করেন, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কেন না, কেরলে কংগ্রেস ও সিপিএম পরস্পরের বিরুদ্ধেই লড়াই করেছে।
শুক্রবারই তিনি কলকাতায় কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয় বিধান ভবনে রাজ্যের চার শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। প্রত্যেককে প্রদেশ সভাপতি জানিয়ে দেন, খুব তাড়াতাড়িই তিনি বাম নেতাদের সঙ্গে জোট নিয়ে বৈঠকে বসে চূড়ান্ত কথাবার্তা সেড়ে ফেলতে চান। শুধু তাই নয়, প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং আবদুল মান্নানকে এ বিষয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের (সিপিএমের প্রধান কার্যালয়) সঙ্গে কথা বলে সেই বৈঠকের দিন চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেন। তার পরই বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসিদের মনোভাব তাঁর কানে আসে। শনিবার তাঁদের এক প্রকার সতর্কই করে দেন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, একক শক্তিতে যদি সামনের নির্বাচনে কংগ্রেস লড়াই করে, তা হলে গতবারের বিধায়কদের অধিকাংশকেই আর বিধানসভায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না তাঁরা। তাই বামেদের সঙ্গে জোট করে দুই পক্ষের মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পুরনো বিধায়কদের সামনে বিধানসভার দরজা খুলে দিতে চাইছেন তিনি।
সূত্রের খবর, বামেদের সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে প্রদেশ সভাপতির সামনেই এক কংগ্রেস নেতা সরাসরি আপত্তি করেন। তখনই ক্ষুব্ধ অধীর তাঁকে বলেন, ‘রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস জোট চাইছে হাইকমান্ড। হাইকমান্ডের নির্দেশ সকলকে মানতেই হবে।’ পাশাপাশি সেই কংগ্রেস নেতার কাছে তিনি জানতে চান, একক ভাবে লড়লে রাজ্যের কোন আসন থেকে তিনি জিতে আসতে পারবেন? অধীরের এই প্রশ্নের জবাব সেই নেতা দিতে পারেননি বলে খবর। তখনই তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কংগ্রেসে থেকে হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করা যায় না। বাম–কংগ্রেস জোট সকলকে মেনে নিতে হবেই। তাঁর এই বক্তব্য কংগ্রেসের মধ্যে যাঁরা বামেদের সঙ্গে জোটের বিরোধী, তাঁদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।